মনপুরা মুভি - Monpura Movie

মনপুরা মুভি

মনপুরা হল ২০০৯ সালের বাংলাদেশী বাংলা ভাষার একটি মুভি। যা গিয়াসউদ্দিন সেলিম পরিচালিত এবং গিয়াসউদ্দিন সেলিম এই মুভিটি পরিচালনার মাধ্যমে প্রথম বড় পর্দায় আত্মপ্রকাশ করেন। মনপুরা বাংলাদেশের গ্রামীণ একটি রোমান্টিক ট্র্যাজেডি মুভি। বগুড়া, কুষ্টিয়া ও ঢাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ বিভিন্ন লোকেশনে শুটিং হয়েছে। এতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী ও ফারহানা মিলি।

মুভিটি মাছরাঙ্গা প্রোডাকশনের পরিবেশনায় ২০০৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পায়। মুক্তির প্রথম সপ্তাহে মুভিটি রেকর্ড পরিমাণ বক্স অফিস সংগ্রহ করেন এবং দেশের অন্যতম জনপ্রিয় মুভি হয়ে ওঠে। মনপুরা ২০০৯ সালের সর্বোচ্চ আয়কারী বাংলাদেশী মুভি এবং সর্বকালের ৭তম সর্বোচ্চ আয়কারী মুভি।

মুভিটি ভক্তদের কাছ থেকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়েছে, বিশেষ করে এর পরিচালনা এবং ভিজ্যুয়ালের জন্য, যা বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবনকে ধারণ করেছে। মনপুরা ৩৪ তম বাংলাদেশ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শীর্ষস্থানীয় পাঁচটি পুরস্কার জিতেছে (সেরা চলচ্চিত্র, সেরা অভিনেতা, নেতিবাচক ভূমিকায় সেরা অভিনেতা, সেরা মহিলা প্লেব্যাক গায়ক এবং সেরা চিত্রনাট্য)। মুভিটি ২১ শতকের একমাত্র মুভি হয়ে উঠেছে এবং বাংলাদেশের মুভির নতুন যুগের অন্যতম সেরা মুভি হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

২০১০ সালে "অচিন পাখি" নামে ভারতীয় বাংলায় মুভিটি পুনঃনির্মাণ করা হয়েছিল, যা অঞ্জন দাস দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল।

একনজরে মনপুরা মুভির বিবারণ:

  1. পরিচালক: গিয়াসউদ্দিন সেলিম
  2. প্রযোজক: অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু
  3. রচয়িতা: গিয়াসউদ্দিন সেলিম
  4. শ্রেষ্ঠাংশে:
    • চঞ্চল চৌধুরী
    • ফারহানা মিলি
    • মামুনুর রশীদ
    • শিরীন আলম
    • ফজলুর রহমান বাবু
    • মনির খান শিমুল
  5. সুরকার: শায়ান চৌধুরী অর্ণব
  6. চিত্রগ্রাহক: কামরুল হাসান খসরু
  7. সম্পাদক: ইকবাল এ. কবির
  8. পরিবেশক: মাছরাঙ্গা প্রোডাকশন
  9. মুক্তি: ২০০৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি
  10. স্থিতিকাল: ১৩৮ মিনিট
  11. দেশ: বাংলাদেশ
  12. ভাষা: বাংলা
  13. আয়: 8 কোটি টাকা

মনপুরা মুভির পটভূমি:

সোনাই (চঞ্চল চৌধুরী) ধনী গাজী সাহেবের বাড়ির কাজের লোক। গাজীর ছেলে হালিম মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন এবং সে ওই বাড়িতে কাজ করা এক মহিলাকে খুন করে। কিন্তু গাজী সেই খুনের দায় জোর করে সোনাই উপর চাপিয়ে দেয়। সোনাই একজন অনাথ তাই সে ছোন বেলা থেকে গাজীর বাড়িতেই আছে যে কারনে তিনি আর কোনো উপায় না পেয়ে হত্যার দায় স্বীকার করে নেয়। গাজী তাকে পুলিশের হাত থেকে বাচানোর নাম করে "মনপুরা" নামক একটি দ্বীপে একা রেখে আসেন। যেখানে সে বিভিন্ন ধরনের ফসল ফলাত এবং গরু, ছাগল পালন করত যারা তার সঙ্গি ছিলেন। এছাড়াএ একটা ময়না পাখি ছিল যার সাথে কথা বলে সময় কাটাত সোনাই।

সেই দ্বীপের কাছে মাছ ধরতে একজন জেলে তার কন্যা পরীকে নিয়ে আসতেন। তারা মাছ ধরতে এলেই সে দ্বীপের কিনারায় গিয়ে তাদের মাছ ধরা দেখত। সোনাই আর পরীর সাথে কখনো কথা হয়নি তবুও তারা একে অপরের প্রেমে পড়ে যায়। পরীর বাবা একদিন আকাশে মেঘ দেখে মাছ ধরতে বেড় হয় না, কিন্তু পরী সোনাইকে দেখার জন্য আস্থীর হয়ে পড়ে সে জন্য সে একায় নৌকা নিয়ে বেড় হয়ে যায়। এদিকে সোনাই ও পরীকে দেখতে না পেয়ে আস্থীর হয়ে পড়ে, তখনি সোনাই দেখতে পায় দ্বীপে একটি নৌকা এসেছে। দৌরে গিয়ে দেখে পরী এসেছে তখন সে পরীকে তার বাসায় নিয়ে আসে, সেই দিন পরী সেখানেই থাকে এবং সোনাই পরীকে তার জীবনের সব কথা বলেন। সব শুনে পরী তাকে বিয়ে করার কথা গাজী সাহেবকে বলতে বলেন, তারপর সেখান থেকে চলে যায়।

গাজী কয়েকদিন পর পর মনপুরা দ্বীপে এসে ছাগল গরু নিয়ে যেত এবং সোনাইকে প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র দিয়ে যেতেন। সেইদিন গাজী সাহেব পরীকে দেখে নেয় এবং তার আসার কারণ জানতে চাইলে সোনাই তাকে পরীকে ভালোবাসে সে কথা জানায় এবং তার সাথে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে জেতে বলেন। সব শুনে গাজী সাহেব একপ্রকার নিরুপায় হয়েই বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবে বলে, সোনাইকে কথা দেন। কিন্তু তিনি পরীর বাড়ি দিয়ে তার বাবার কাছে সেনাই এর পরিবর্তে নিজের ছেলে হালিমের বিয়ের প্রস্তাব দেন।

প্রথমে, পরীর বাবা প্রস্তাবটি গ্রহণ করেননি, কারণ তিনি তার মেয়েকে একজন পাগলের সাথে বিয়ে করতে দিতে চাননি। কিন্তু গাজী চালাকি করে বলেন যে, তার সমস্ত সম্পত্তি মালিক তার মেয়ে পরী হবে। সম্পত্তির লোভে পড়ে তিনি তার মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজি হন।

সোনাই যখন গাজীর চক্রান্ত বুঝতে পারে, তখন সে নদী সাঁতরিয়ে পরীর কাছে যায় এবং পরের রাতে দুজনে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু সে দিন যখন সোনাই বেড় হবে ঠিক তখনি পুলিশ চলে আসে তাকে দরার জন্য এবং তাকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এদিকে পরী সোনাইয়ের জন্য আপেক্ষা করতে থাকে, কিন্তু সোনাই না আসায় সে বাড়ি ফিরে যায় এবং তার সাথে হালিমের বিয়ে হয়ে যায়। তার পরেও পরী সোনাইয়ের জন্য অপেক্ষা করে, এবং তার সাথে দেখা করতে চায়।

গাজীর স্ত্রী বুজতে পারে যে পরী এখনো সোনাইকে ভালোবাসে, তাই সে মিথ্যা কথা বলে যে সোনাইকে শুক্রবার রাত ১২টা ০১ মিনিটে ফাঁসি দেওয়া হবে। তিনি ভেবেছিলেন এমন বললে হয়তো পরী সোনাইকে ভুলে যাবে এবং তার ছেলেকে ভালোবাসতে শুরু করবে। এদিকে সোনাই নির্দোষ প্রমাণিত হন এবং তাকে শনিবার সকালে মুক্তি দেওয়া হবে। কিন্তু পরী সেটা জানতেন না, সে ভাবে যে সোনাইকে শুক্রবার রাত ১২টা ০১ মিনিটে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে, তাই সেও সেদিন মধ্যরাতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। পরের দিন সকালে সোনাইকে জেল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়, জেল থেকে ছারা পেয়ে সরাসরি পরীর কাছে চলে আসে। সেখানে এসে সোনাই দেখতে পায় পরীর আর বেচে নেয়।