দেবদাস মুভি - Devdas Movie

দেবদাস মুভি

দেবদাস ২০০২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি ভারতীয় হিন্দি ভাষার রোমান্টিক ড্রামা মুভি, যা শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিখ্যাত উপন্যাস "দেবদাস" অবলম্বনে নির্মাণ করা হয়েছে। মুভিটি রচনা ও পরিচালনা করেছেন সঞ্জয় লীলা বনশালি এবং মেগা বলিউড এর অধীনে প্রযোজনা করেছেন ভরত শাহ। এতে প্রধান ভূমিকায় অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান, ঐশ্বরিয়া রাই ও মাধুরী দীক্ষিত এবং জ্যাকি শ্রফ, কিরণ খের, স্মিতা জয়কার ও বিজয়েন্দ্র ঘাটগে সহায়ক ভূমিকায় অভিনয় রয়েছেন।

বনশালি দেবদাস উপন্যাসটিকে দ্বিতীয়বার পড়ার পর একটি মুভিতে পুনঃনির্মাণ করতে অনুপ্রাণিত হন এবং ১৯৯৯ সালের নভেম্বরে তার ঘোষণা দেন। মুভিটির চিত্রগ্রাহক পরিচালনা করেছেন বিনোদ প্রধান। এর প্রধান চিত্রগ্রাহক শুরু হয় ২০০০ সালের নভেম্বর মাসে এবং ২০০২ সালের এপ্রিল মাসে চিত্রগ্রাহক শেষ হয়। মুভিটি সম্পাদনা করেছেন বেলা সেহগাল এবং সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন ইসমাইল দরবার ও মন্টি শর্মা

ইরোস ইন্টারন্যাশনাল দ্বারা ২০০২ সালের ১২ জুলাই মুক্তি পায়। ভারতীয় মুদ্রায় ৫০ কোটি টাকা বাজেটের সাথে এটি সেই সময়ে নির্মিত সবচেয়ে ব্যয়বহুল ভারতীয় মুভি ছিল। মুভিটি মুক্তির কিছু দিন পরে আরো ছয়টি ভাষায় (ইংরেজি, জার্মান, ফরাসী, মান্দারিন, পাঞ্জাবী এবং থাই) সংস্করণ করে মুক্তি দেওয়া হয়। মুভিটি একটি বড় বাণিজ্যিক সাফল্য ছিল এবং বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৬৮ কোটি টাকা আয় করে বছরের সর্বোচ্চ আয়কারী ভারতীয় মুভি হিসাবে আবির্ভূত হয়।

অভিনয়ে:

  • দেবদাস মুখার্জির চরিত্রে শাহরুখ খান
  • পার্বতী ‘পারো’ চৌধুরী চরিত্রে ঐশ্বরিয়া রাই
  • চন্দ্রমুখী চরিত্রে মাধুরী দীক্ষিত
  • চুন্নিলালের চরিত্রে জ্যাকি শ্রফ
  • সুমিত্রা চক্রবর্তীর চরিত্রে কিরণ খের
  • কৌশল্যা মুখার্জির চরিত্রে স্মিতা জয়কার
  • দ্বিজদাস মুখোপাধ্যায়ের চরিত্রে মনোজ জোশী
  • কুমুদ মুখার্জির চরিত্রে অনন্যা খারে
  • কালিবাবুর চরিত্রে মিলিন্দ গুনাজি
  • ভুবনের মায়ের চরিত্রে দিনা পাঠক
  • ভুবন চৌধুরীর চরিত্রে বিজয়েন্দ্র ঘাটগে
  • ধরমদাসের চরিত্রে টিকু তালসানিয়া
  • মনোরমা চরিত্রে জয়া ভট্টাচার্য
  • নীলকান্ত চক্রবর্তীর চরিত্রে সুনীল রেগে
  • মিস্টার নারায়ণ মুখার্জির চরিত্রে বিজয় কৃষ্ণ
  • কালীবাবুর মায়ের চরিত্রে অমরদীপ ঝা
  • বদি আপা চরিত্রে অপরা মেহতা
  • কাকার চরিত্রে মুনি ঝা
  • যশোমতীর চরিত্রে রাধিকা সিং
  • সখীর চরিত্রে দিশা ভাকানি

কাহিনী সংক্ষেপ:

জমিদার নারায়ণ মুখোপাধ্যায় (বিজয় কৃষ্ণা) ও তার স্ত্রী কৌশল্যা মুখোপাধ্যায় (স্মিতা জ্যাকার) একটি চিঠির মাধ্যমে জানতে পারেন, তাদের ছোটো ছেলে দেবদাস (শাহরুখ খান) ইংল্যান্ডে লেখাপড়া শেষ করে দশ বছর পর বাংলার তালসোনাপুরে তাদের গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসছেন। কৌশল্যা ছেলের দেশে আসার খবরটি প্রতিবেশি সুমিত্রাকে জানান, সুমিত্রাও দেবদাসের দেশে ফেরার কথা শুনে তার মায়ের মতোই বেশ খুশি হয়ে ওঠেন। তখন তিনি কৌশল্যাকে তার মেয়ে পার্বতী ‘পারো’ চৌধুরির (ঐশ্বরিয়া রাই) সঙ্গে দেবদাসের ছেলেবেলাকার বন্ধুত্বের কথা বলতে গিয়ে তার চোখে জল এসে আসে। এদিকে পারো দেবদাসের স্মরণে একটি প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখে এবং সে কখনও প্রদীপটি নিভতে দেয় না।

দেবদাস গ্রামে ফিরে প্রথমে নিজের বাড়িতে না গিয়ে তার ছেলেবেলার প্রণয়িনী পারোর বাড়ি যায়। এতে কৌশল্যা মনে মনে কষ্ট পান। এরপরে পারোর মা সুমিত্রা দেবদাসের সঙ্গে তার বিয়ের প্রস্তাব দেন, কিন্তু দেবদাসের পরিবার তাদের আভিজাত্য ও বংশমর্যাদার কথা ভেবে সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দেয়। এতে সুমিত্রা ভীষন রাগ করেন এবং প্রতিজ্ঞা করেন যে তাদের থেকেও ভাল পরিবারে তিনি তার মেয়ের বিয়ে দেবেন। তারপরে তিনি তার মেয়েকে জমিদার ভুবন চৌধুরীর সঙ্গে বিয়ে দেন। ভুবন চৌধুরী বিপত্নীক ও তিন সন্তানের পিতা ছিলেন। এতে দেবদাস মনে ভিশন ভাবে আঘাত পান এবং আশাভঙ্গ হয়ে সে কলকাতায় যান। সেখানে গিয়ে তার বন্ধু চুন্নিবাবুর (জ্যাকি শ্রফ) সাথে পতিতালয়ে যাতায়াত শুরু করে। সেই পতিতালয়ে তার সাথে চন্দ্রমুখী (মাধুরী দীক্ষিত) নামে এক বাইজির সাথে তার পরিচয় হয়।

এদিকে পারো তার শ্বশুরবাড়ির মৃতা সতীনের ছেলেমেয়েদের সহ বাড়ির সকলকে আপন করে নেয় এবং বাড়ির সব দায়দায়িত্ব সুগৃহিণীর মতো নিজের কাঁধে তুলে নেয়। আর অন্যদিকে দেবদাস নিয়মিত মদ খেতে শুরু করে। তার কিছুদিন পর দেবদাসের পিতা মারা যান। তা্‌ই দেবদাসকে দেখার উদ্দেশ্যে পারো তার বাবার শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়। কিন্তু দেবদাস সেখানেও মদ্যপান করে অসভ্যতা করে এবং প্রচুর মদ্যপান করার ফলে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে, ফলে তখন থেকে নিজের বাড়িতে থাকতে শুরু করে দেবদাস। কিন্তু তার কিছুদিন পর দেবদাসের ভ্রাতৃবধূ তার বিরুদ্ধে চুরির গুরুতর অভিযোগ আনে এবং তাকে ঘরছাড়া করে।

পারোর কানে দেবদাসের মাদকাসক্তির কথা যায়। তখন সে দুর্গাপূজার জন্য বেশ্যাদ্বারমৃত্তিকা সংগ্রহের করার অছিলায় চন্দ্রমুখীর কাছে গিয়ে হাজির হয়। সেখানে গিয়ে পারো চন্দ্রমুখীর সঙ্গে বাদানুবাদ করেন। পরে পারো বুঝতে পারে যে, চন্দ্রমুখীও তার মতোই দেবদাসকে ভালবাসে। তখন পারো তার বাড়ির দুর্গাপূজা উপলক্ষে চন্দ্রমুখীকে নিমন্ত্রণ করে। চন্দ্রমুখী পারো বাড়িতে পুজো দেখতে গেলে, সেখানে সকলের সামনে ভুবন চৌধুরীর জামাই চন্দ্রমুখীর পরিচয় ফাঁস করে দেয়। এতে করে পারোর সঙ্গে দেবদাসের সম্পর্কের কথাও জানাজানি হয়ে যায়, ফলে ভুবন চৌধুরী পারোকে বাড়ির বাইরে যেতে নিষেধ করে দেন।

এদিকে দেবদাসের শারীরিক অসুস্থতা মারাত্মক আকার নেন, সে কারণে সে হাওয়া বদল করার জন্য ঘুরতে বের হয়। পথে ট্রেনে চুনিবাবুর সঙ্গে তার দেখা হয়, ফলে দুই বন্ধু মিলে প্রচুর মদ্যপান করে। তাতে দেবদাসের শরীরের আবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায়। নিজের মৃত্যু আসন্ন বুঝতে পেরে দেবদাস পারোর শ্বশুরবাড়ির সামনে গিয়ে উপস্থিত হয়। পারো দেবদাসকে দেখার জন্য বাড়ির বাইরে যেতে চায়। কিন্তু তার আগেই তার স্বামী ভুবন চৌধুরী বাড়ির দরজা বন্ধ করে দেন। পারোকে দেখার আশা নিয়েই তার বাড়ির বাইরে দেবদাসের মৃত্যু ঘটে।